ফরিদপুর প্রতিনিধি: ফরিদপুর শহরের চৌধুরীবাড়িতে অবস্থিত “আঞ্চলিক সমবায় ইনস্টিটিউট”টি দূর্ণীতির বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে ক্রমশ: দূর্বল প্রতিষ্ঠানে পরিনত হচ্ছে মর্মে অভিযোগ উঠেছে। ফলে এখানের প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে। তাছাড়া এখানের কর্তাব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও শোনা যাচ্ছে ব্যাপক অনিয়ম, লুটপাট ও স্বেচ্ছাচারিতার নানান ফিরিস্তি।
অভিযোগের ফিরিস্তিতে রয়েছে, ইনস্টিটিউটে বিভিন্ন সমবায়ীদের (নারী পুরুষ) প্রশিক্ষণ ও ইনস্টিটিউটের উন্নয়নের নামে সরকারি বরাদ্দকৃত টাকা অপচয় ও ভূয়া ভাউচার দেখিয়ে লুটপাট, আবাসিক হোস্টেল ব্যবস্থায় অনিয়ম, নিম্নমান খাবার পরিবেশন ও ডাইনিং রুমের বেহাল পরিস্থিতি, শ্রেণী কক্ষের অব্যবস্থাপনা, প্রশিক্ষণার্থী বাছাইয়ে স্বজনপ্রীতি, প্রশিক্ষণার্থীগণের মধ্যে সরকারি ভাতা প্রদানে দূর্ণীতি, শিক্ষা সফরের নামে অর্থ লোপাট, পরীক্ষায় অনিয়ম, বিশেষ সুবিধা নিয়ে পরীক্ষার ফল প্রকাশ, অনভিজ্ঞ অতিথি প্রশিক্ষক নিয়োগ, ইনস্টিটিউটের ৩য় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারির মাধ্যমে পাঠদান, কোর্স উদ্বোধন, সমাপনী অনুষ্ঠান পরিচালনা ও সনদ বিতরণ, পুরস্কার ও শিক্ষা সামগ্রী ক্রয়ে অর্থ বানিজ্য, বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ কোর্স পরিচালনায় রাস্ট্রীয় ও সমবায়ীদের সিডিএফের অর্থ অপচয় ও লুটপাট, অধ্যক্ষের স্বেচ্ছারিতা, খামখেয়ালীপনা কার্যকলাপ, দূর্ণীতি ও অফিসে নিয়মিত অনুপস্থিতি, ইনস্টিটিউটের প্রশাসনিক ব্যবস্থায় নৈরাজ্য সৃষ্টি, বিনোদন ও ক্রীড়া সামগ্রী ক্রয়ে দূর্ণীতি, সরকারী মালামাল রক্ষণাবেক্ষণে উদাসীনতা, কম্পিউটার ল্যাবের উন্নয়নের নামে অর্থ আত্নসাৎ, স্থানীয় সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারদের সাথে খারাপ আচরণ করা ও ইনস্টিটিউটের অভ্যন্তরে অবস্থিত মন্দিরে পূজা উদযাপনে ব্যাঘাত সৃস্টি ইত্যাদী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইনস্টিটিউটে কর্মরত দুইজন, কয়েকজন প্রশিক্ষণার্থীসহ স্থানীয় বাসিন্দারা এ প্রতিবেদককে জানান, ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ খোন্দকার হুমায়ূন কবীর যোগদানের পর থেকেই এখানের সার্বিক ব্যবস্থাপনা ভেঙ্গে পড়েছে। সপ্তাহে ২/১ দিন অফিসে আসেন। তাও আবার কম্পিউটারে রুদ্ধদ্বার সাহিত্য চর্চায় মেতে থাকেন সারাক্ষণ। দুদিন অফিসে থেকেই “ব্যাগ গুছিয়ে” বিভিন্ন অজুহাতে চলে যান ঢাকায় নিজ পরিবারের নিকট অথবা পাবনায় গ্রামের বাড়িতে। যাবার সময় “বিশেষ ব্যাগ”টি গুছিয়ে নিরাপদে বাসে তুলে দেবার দায়িত্বে থাকা “সমবায় পরিদর্শক” আক্তারুজ্জামান ও অফিসের “কম্পিউটার কাম মুদ্রাক্ষরিক” মনির হোসনকে পুরো ইনস্টিটিউট ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থায় দায়িত্ব দিয়ে পদ্মা পাড়ি দেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত ঐ দুজনই অধ্যক্ষের অনুপস্থিতির সুযোগে সবকিছু ম্যানেজ করেই দায়সারাভাবে বিভিন্ন চলমান কোর্সগুলি সম্পন্ন করে থাকে। বিভিন্ন অনিয়মের কারনে বহুল আলোচিত সমবায় পরিদর্শক আক্তারুজ্জামান ও মনির হোসেন স্থানীয় লোক হওয়ায় বিভিন্ন প্রভাব খাটিয়ে বছরের পর বছর একই ইনস্টিটিউটে চাকরী করে আসছেন। মামা খালুদের বিশেষ তদবীরে চাকরী লাভ করা এই দুইজনই কখনও কখনও নিজেদেরকে ইনস্টিটিউটের প্রধান কর্তা হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। এদের প্রভাবে এখানে কর্মরত ভিন্ন জেলার কর্মচারীরাও আজ কোনঠাসা। নিয়ম না থাকলেও অধ্যক্ষ খোন্দকার হুমায়ুন কবীর, সমবায় পরিদর্শক আক্তারুজ্জামান, কম্পিউটার অপারেটর মনিরসহ ৫/৬ জন স্থানীয় কর্মচারী প্রভাব খাটিয়ে তিনবেলা সমবায়ী প্রশিক্ষণার্থীদের খাবার জোর করে “ফ্রি” খেয়ে আসছেন। ফলে অনেক সময় আগত সমবায়ীরা খাবার সংকটে পড়ছেন।
সূত্র মতে, অধ্যক্ষের অনুপস্থিতিতে আক্তারুজ্জামান ও মনির হোসেন প্রায়ই ইনস্টিটিউট অরক্ষিত অবস্থায় ফেলে রেখে বাড়ীতে চলে যান। কখনও কখনও ইনস্টিটিউটটি কর্মকর্তা/কর্মচারী ও প্রশিক্ষণার্থী শুন্য হয়ে পড়ে। এখানে কর্মরত আক্তারুজ্জামান ও মনির হোসেনসহ বেশ কয়েকজন স্থানীয় হওয়ায় তাদের অনিয়মের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। ফলে নানা অনিয়ম, অব্যস্থাপনা ও দূর্ণীতির কারনে প্রতিষ্ঠানটি দিনে দিনে ঝিমিয়ে পড়ছে।
স্বরজমিনে গিয়ে উল্লেখিত অভিযোগগুলির সত্যতা পাওয়া গেলেও অধ্যক্ষ এবং আলোচিত দুইজনের বিরুদ্ধে ভয়ে মুখ খুলতে নারাজ অনেকেই। পুরো ইনস্টিটিউটের ক্যাম্পাসটি অস্বাস্থ্যকর ও অরক্ষিত। গোচারন ভূমিতে পরিনত হয়েছে। এখানে দারোয়ান ও নৈশ প্রহরী না থাকায় সন্ধ্যা হলেই মনিরের সহযোহিতায় ও প্রশ্রয়ে মাদক সেবীদের দৌরাত্ব বৃদ্ধি পায়। ফলে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নারী ও পুরুষ প্রশিক্ষার্থীগণ পড়েন নানান বিড়ম্বনায়। ইতোমধ্যে ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আগত প্রশিক্ষণার্থীদেরকে নিরাপত্তা প্রদানে ব্যর্থতার অভিযোগও উঠেছে।
উত্থাপিত সকল অভিযোগের বিষয়ে উল্লেখিত অধ্যক্ষ এবং স্থানীয় আক্তারুজ্জামান ও মনির হোসেন নিজেদেরকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য নহে। আমরা নিয়মতান্ত্রীকভাবেই প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করে আসছি।
স্থানীয় সুশীল সমাজ এবং বৃহত্তর ফরিদপুরের সমবায়ীরা ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্ণীতির বেড়াজাল থেকে এই প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করতে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের মাননীয় মন্ত্রী, সচিব এবং সমবায় অধিদপ্তরের কর্তাব্যক্তিসহ ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের আশু ও কার্যকরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।